ঢাকা | বঙ্গাব্দ

গাছ কেটেছে কারা জানেন না উপাচার্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ফেলা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
  • আপলোড তারিখঃ 10-11-2023 ইং
গাছ কেটেছে কারা জানেন না উপাচার্য ছবির ক্যাপশন: tree

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ফেলা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। 

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গাছ কাটার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘গাছ কারা কেটেছে এ বিষয়ে আমি জানি না। আমার অনুমতি নেওয়া হয়নি, আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’ তাঁর দাবি, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় তিনি গাছ কেটে আইবিএকে ভবন করতে নিষেধ করেছিলেন।

গতকাল বুধবার ভোরের আঁধারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকার সুন্দরবন নামের স্থানে আইবিএর ভবন নির্মাণের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ কাটা হয়। এ বিষয়ে প্রশাসন থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের দাবি, কে বা কারা গাছগুলো কেটেছে, তা জানে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে আইবিএর পরিচালক অধ্যাপক কে এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁদের ইনস্টিটিউটের ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এই দরপত্রের যাঁরা কার্যাদেশ পেয়েছেন, তাঁরাই গাছগুলো কেটেছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেছেন, গাছ না কাটলে ভবন করবে কীভাবে।


গাছ কাটার প্রতিবাদে দুই দিন ধরে প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরেও একদল শিক্ষার্থী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা নতুন প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে বেলা সোয়া দুইটার দিকে তালা খুলে দিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলাপ করেন আন্দোলনকারীরা।

অন্যদিকে যেখানে গাছ কাটা হয়েছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছে। আরেকটি দল প্রতিবাদ জানিয়ে ওই স্থানেই ‘সুন্দরবন পুনরুদ্ধার’ নামের একটি পথনাটক করেছে। গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের (একাংশ) নেতা-কর্মীরা।

এর আগে গতকাল গাছ কাটার খবর জানাজানি হলে বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যেখানে গাছ কাটা হয়েছে, সেখানে যান। সেখানে তাঁরা আইবিএর ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের নামফলক ভেঙে দেন। আরেক দল শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে ১১টি চারা লাগান। শিক্ষার্থীদের একটি দল কাটা গাছের টুকরায় কাফনের কাপড় পেঁচিয়ে বিক্ষোভ করেন।

গাছ কারা কেটেছে তা জানেন না বলে উপাচার্য যে মন্তব্য করেছেন, তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের (একাংশ) সহকারী সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এতগুলো গাছ কাটা এবং কাঠ চুরি করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়। যদি উপাচার্য এবং প্রক্টর এ বিষয়ে না জানেন, তাহলে আমরা মনে করি, তাঁরা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ এবং ক্যাম্পাস সর্বোচ্চ অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়াই উত্তম।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার মনোনয়নের জন্য ভবন নির্মাণের প্রয়োজন হতে পারে, তবে তা পরিবেশ ও প্রতিবেশ নির্বিচার ধ্বংস করে প্রাণবৈচিত্র্যকে হুমকির মধ্যে ফেলে নয়। রাতের আঁধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেউ প্রবেশ করে এতগুলো গাছ কেটে নিয়ে চলে গেল, আর তা উপাচার্য জানেন না, এটা তিনি বললেও সাধারণ জ্ঞানে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার কাছে অভাবনীয়, অবিশ্বাস্য। এই ন্যক্কারজনক ঘটনা যদি সত্যিই উপাচার্যের অগোচরে তাঁর অনুমতি ছাড়া ঘটে থাকে, তা খুবই ভয়ংকর একটা ব্যাপার। এটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ কাটা হলে সেসব গাছ বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখাকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। তবে গাছ কাটার পর দুদিন পার হলেও গাছগুলো এস্টেট শাখাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে এস্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান বলেন, ‘কাটা গাছগুলো আমরা এখনো বুঝে পাইনি। আইবিএ আমাদের জানিয়েছে, গাছগুলো ক্যাম্পাসেই আছে, তবে কোথায় আছে তার নির্দিষ্ট লোকেশন আমাদের জানানো হয়নি।’

এ বিষয়ে আইবিএ পরিচালক অধ্যাপক কে এম জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গাছগুলো এস্টেট শাখাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। গাছগুলো ক্যাম্পাসেই থাকার কথা। তবে কোথায় রাখা হয়েছে, তিনি জেনে জানাবেন।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ E-Press

কমেন্ট বক্স
notebook

ঢাকায় পুলিশের গাড়িতে আগুনের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার